নিজস্ব প্রতিনিধি: আমরা পর্বতে বসবাস করি সেজন্যে এই দিবসটি ব্যাপক পরিসরে পালন করতে হবে। পর্বত এবং পাহাড়ের টিকে থাকার গুরুত্ব সবাইকে বুঝাতে হবে। বন উজাড়ের কারণে পাহাড় ধ্বসের মত ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটেছে। ভবিষ্যতে এই ধরনের দুর্যোগে পাহাড়ের মানুষ আরো সংকটে পড়বে বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী।
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের আয়োজনে রাঙ্গামাটিতে আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস ২০২১ উপলক্ষে শনিবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে অনুষ্ঠিত আলোচনাসভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমরা এখন সবকিছু হারিয়ে আফসোস করছি। ছড়াতে পানি নেই এবং পানি না থাকার কারণে বনও ধ্বংস হওয়ার পথে। পরিবেশ এবং পাহাড় নিয়ে যেভাবে সচেতন হওয়ার কথা সেভাবে আমরা সচেতন হইনি। এক বক্তা বিখ্যাত মণীষী কনফুসিয়াসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন এই পৃথিবীর মালিক আমরা নই, আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম বা আমাদের সন্তানেরা এই পৃথিবীর মালিক। কথাটা আমিও বিশ^াস করি। আমরা যদি আমাদের সন্তানদের ভালোবাসি এবং তাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করি তাহলে আমাদেরকে এই পৃথিবীর যাতে খারাপ কোন কিছু না হয় তার চেষ্টা করতে হবে। তিনি বলেন, ৫০ এর উপরে যাদের বয়স তারা পূর্বের এবং বর্তমান যুগটা দেখেছে। বাবা এবং দাদার আমলে মানুষ কম ছিল এবং পরিবেশ ভালো ছিল। গ্রামের মানুষেরা পরিবেশ নিয়ে সচেতন। প্রকৃতির সঙ্গে তারা খাপ খাইয়ে চলতে অভ্যস্ত। ১৭ সালে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বেশি ক্ষতি হয়েছে পৌর এলাকায়। গ্রামে নয়। বাইরের মানুষ এখানকার পরিবেশের সাথে অভ্যস্ত এবং পরিচিত নয় বলেই এখানকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। শুধু পরিবেশ পরিবেশ বলে সময় নষ্ট করলে চলবেনা। পরিবেশ উন্নয়নের জন্য স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করে আমাদেরকে পরিবেশ রক্ষায় বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিতে হবে।
পরিষদের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনাসভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিষদ সদস্য সবির কুমার চাকমা।
আলোচ্য দিবসটির উপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের সহকারি অধ্যাপক ড. নিখিল চাকমা।
প্রবন্ধের উপর আলোচনায় অংশ নেন রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাঃ আশরাফুল ইসলাম, পরিষদ সদস্য প্রিয়নন্দ চাকমা, পরিষদ সদস্য প্রবর্তক চাকমা, ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাঃ নীতিশ চাকমা এবং জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ।
তারা বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের পাহাড়ের ক্ষতি না করে এ সম্পদকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো গেলে পার্বত্য চট্টগ্রামের কৃষির প্রসার ঘটিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটনো সম্ভব। বাইরের উন্নত দেশের ন্যায় আমাদের দেশের পর্বতগুলোকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে পর্যটকদের কাছে আরো আকর্ষণীয় করা সম্ভব। পার্বত্য এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নয়ন এবং টেকসই ভবিষ্যতকে সামনে রেখে আমাদের বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। প্রকৃতির অপরূপ দান পাহাড়, পর্বতকে সুরক্ষা করে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে এই দিবসটি পালন বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।
আলোচনাসভার পূর্বে পরিষদ চত্তরে অতিথিরা বেলুন এবং কবুতর উড়িয়ে দিবসটির শুভসূচনা করেন।